করোনা: হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা
নিউজ ডেস্ক: গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের খুলনা ও রংপুর বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো অর্ধশত রোগী মারা গেছেন। এ দুটি বিভাগের হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর ভিড় দিনদিন বাড়ছে। বহু হাসপাতালে শয্যাসংকটের কারণে অতিরিক্ত রোগীরা পর্যাপ্ত চিকিত্সা না পেয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ‘আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) শয্যা খালি নেই’ বলে কোনো কোনো হাসপাতাল সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। এদিকে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব প্রায় দেড় বছর হতে চললেও এখন পর্যন্ত রংপুর বিভাগের ছয় জেলায় একটি আইসিইউ শয্যারও ব্যবস্থা করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ।
রংপুরে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু
রংপুর বিভাগে করোনা ভাইরাসে প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। সব রেকর্ড ভেঙে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভাগে এক দিনে এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। এর মধ্যে দিনাজপুর জেলার পাঁচ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের চার জন, গাইবান্ধার দুই জনসহ রংপুর, লালমনিরহাট ও পঞ্চগড়ের এক জন করে রয়েছেন। একই সময়ে নতুন করে ৫৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, জেলা শহরের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের আইসিইউতে কোনো শয্যা ফাঁকা নেই। বিভাগের আট জেলায় দেড় কোটির বেশি মানুষের জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে মাত্র ৪৬টি। এর মধ্যে রংপুর ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে ১০টি (সচল ৮টি), রামেক হাসপাতালে ২০টি, দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬টি শয্যা রয়েছে। এসব হাসপাতালে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর দিকেই শয্যা বৃদ্ধির কথা থাকলেও তা আর হয়নি। এছাড়া বিভাগের ছয় জেলা কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো হাসপাতালেই আইসিইউ শয্যা নেই।
রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালের ইনচার্জ এস এম নুরুন্নবী জানান, শনিবার দুপুর পর্যন্ত এই হাসপাতালে ৯৩ জন রোগী ভর্তি আছেন। কিন্তু আইসিইউতে কোনো শয্যা ফাঁকা নেই। তিনি জানান, বিকল্পভাবে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিতে হবে এখনই। সরঞ্জাম, চিকিত্সক ও কর্মী বাড়ানো না গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। এরই মধ্যে তাদের হাসপাতালের সামনে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে—‘আইসিইউতে কোনো বেড ফাঁকা নেই।’
এদিকে শনিবার দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ শয্যাবিশিষ্ট নতুন করোনা ইউনিট চালু করা হয়। জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় জানান, রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা না থাকায় নতুন এই করোনা ইউনিটটি চালু করা হলো। এই ইউনিটে আইসিইউর সুবিধা না থাকলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকবে।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবু মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলাম জানান, রংপুর বিভাগে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশের বেশি। শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এই বিভাগে ৫৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইসিইউ শয্যার সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এ কারণে কোথাও কোথাও চিকিত্সা দিতে সমস্যা হচ্ছে। আমরা আইসিইউ শয্যাসহ করোনা রোগীদের চিকিত্সার সব সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
খুলনায় এক দিনে ৩২ মৃত্যু
খুলনা অফিস জানায়, বিভাগে করোনায় ফের বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে কমেছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই সময়ে নতুন করে ৫৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা এসব তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে শুক্রবার খুলনা বিভাগে করোনায় ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে খুলনায় সর্বোচ্চ ১১ জন, যশোরে আট জন, কুষ্টিয়ায় পাঁচ জন, ঝিনাইদহে তিন জন, চুয়াডাঙ্গায় দুই জন, নড়াইলে দুই জন ও মেহেরপুরে এক জন মারা গেছেন। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৫৯ হাজার ২৬০ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ১৬৮ জন। এ সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৯ হাজার ৬৫২ জন।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার (রোগনিয়ন্ত্রণ) ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনার হাসপাতালগুলোতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা জেলার সাত জন রয়েছেন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে ২৫০ জন, কুষ্টিয়ায় ৯৫, মেহেরপুরে ৩৫, সাতক্ষীরায় ২৯, ঝিনাইদহে ১৭, বাগেরহাটে ১৫, চুয়াডাঙ্গায় ১৪, মাগুরায় ৭ ও নড়াইলে ৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বরিশালে শনাক্তের হার ৫৪.৭৩%, ৭ জনের মৃত্যু
বরিশাল অফিস জানায়, শের-ই-বাংলা মেডিক্যালের করোনা ওয়ার্ডে আইসোলেশনে থাকা সাত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত চিকিত্সাধীন ছিলেন ১৮৫ জন করোনা রোগী। মেডিক্যাল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবের সর্বশেষ রিপোর্টে করোনা শনাক্তের হার পাওয়া গেছে ৫৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ১৯০ জনের পরীক্ষায় ১০৪ জনেরই নমুনা পজিটিভ এসেছে। এদিকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা রয়েছে ২০০। নতুন ১০টিসহ আইসিইউর শয্যা রয়েছে ২২টি। এর মধ্যে ২১টি বেডেই রোগী রয়েছেন।
দিনাজপুরে আরো ৮ মৃত্যু
দিনাজপুর স্টাফ রিপোর্টার জানান, জেলায় করোনায় মৃত্যু বাড়ছে। দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিত্সাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার মারা গেছেন আট জন রোগী। এদের মধ্যে করোনা পজিটিভ পাঁচ জন এবং উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন তিন জন। এর আগের দিন মারা গেছেন আরো আট জন। এছাড়া হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড, আইসিইউ ও এইচডিইউতে কোনো শয্যা খালি নেই। নির্ধারিত শয্যার চেয়েও অতিরিক্ত ২৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন করোনা ওয়ার্ডে।
এদিকে দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুরে আরো ১০৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় বর্তমানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৬৫। সূত্র: ইত্তেফাক
The post করোনা: হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা appeared first on বিডি২৪টাইম.কম | BD24TIME.COM.
Comments
Post a Comment