ফিরোজ আহমেদ: রোজিনা সংবাদিকতার একজন মহৎ দৃষ্টান্ত
ফিরোজ আহমেদ: বড়, উঁচু দেয়ালের তিনটা কারণ আছে। দেয়াল সচিবালয়ের মতো বিশাল উঁচু দেয়ালও হতে পারে, অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের মতো আইনের দেয়ালও হতে পারে। দেয়ালের প্রথম কারণটা আরো চুরির বন্দোবস্ত, যদি বলা হয় চুরি ঠেকাবার জন্য এটা করা হচ্ছে। চুরি ঠেকাবার কথা শুনলে নাসিরুদ্দীন হোজ্জা আর বোখারার আমীরের গল্পটা মনে পড়ে। রাজকোষে এতো চুরি যে সেবার সম্পদের অভাবে দুর্ভিক্ষে বোখার আমজনতাকে খাবার দেওয়া যায়নি। রাজকোষে চুরি ঠেকাতে উজির বুদ্ধি দিলেন দেয়াল উঁচু করতে হবে। দেয়াল উঁচু হলো, চুরি আরো বাড়লো। উজীর বললেন, দেয়াল আরও উঁচু করতে হবে, চোর দুর্ধর্ষ। দেয়াল আরও উঁচু হলো, চুরি জ্যমিতিক হারে বাড়লো। ফলে দুর্ভিক্ষ আরো চেপে বসলো। সব শুনে টুনে হোজ্জা বললেন, দেওয়ানজী হিসেব দিক, সর্বেশষ চুরিটা কোন খাতে…। দেওয়ান কাচুমাচু হয়ে বললেন, শেষ চুরিটা দেয়াল তোলার খাতে। বোখারাবাসীর পক্ষ থেকে হোজ্জা বললেন, চোর যদি ভেতরেই থাকে, দেয়াল যতো উঁচু হবে, ততোই চোরের সুবিধা। দেয়াল উঁচু করার দ্বিতীয় কারণটা নিরাপত্তা।
যারা চুরি করে, চুরিতে নেতৃত্ব দেয়, তারা নিজেদের প্রবল রকমের অনিরাপদও ভাবতে থাকে। এটা একটা সম্মিলিত, যাকে বলে যৌথ মনস্তত্ত্ব। তাই সর্বদা তারা আরও বড় উঁচু দেয়াল তোলে, নিজেদের ঘরে ফেলে, আরো বেশি শান্ত্রী আনে, পাহারাদার বসায়। আইনও বানায়। ভাবে যাদেরটা চুরি করা হচ্ছে, সেই মানুষকে ঠেকিয়ে তো রাখতে হবে। কখন ক্ষেপেটেপে যায়। দেয়াল উঁচু করার তৃতীয় কারণটা নিছক মনস্তাত্ত্বিক। দেখবেন অপরাধীরা সর্বদা আড়াল পছন্দ করে। কোনো উদ্যান টিন দিয়ে ঘেরা হলে সেই টিন সরাবার পর দেখবেন, সবুজ গাছেরা নাই হয়ে গেছে। সেখানে সবুজের বদলে হয়েছে চোরতমদের গাড়ি রাখার যায়গা। দেয়ালের আড়ালে সেখানে সবকিছু লুটে নিয়েছে। কোন কার্যালয়ে বিশাল নিরাপত্তার ব্যবস্থা হলে সন্দেহ হয় সেখানে চুরির বন্দোবস্ত আরও বড়। কোনো কার্যালয়ে উঁকিঝুঁকি মারা নিষিদ্ধ করার আইন তৈরি হলে সেই সন্দেহ আরো গাঢ়ই হয়।
চোর যেহেতু সর্বদা সংশয়ে থাকে, এই বুঝি কেউ দেখে ফেললো… কাজেই পৃথিবীর প্রায় সকল চোর দেয়ালের আড়াল, আইনের আড়াল, শান্ত্রী-পাহারাদারের আড়াল- সম্ভাব্য সকল রকম আড়াল নিশ্চিত জন্য একটা মানসিক চাপ অনুভব করতে থাকে। রোজিনা ইসলামকে অভিনন্দন, তিনি এই দেয়াল বহুবার অতিক্রম করেছেন। যেবার পারেননি, সেইবারে তিনি আরও মহৎ। রোজিনা বেগম বলা যায় প্রমিথিউসের মত, মহাক্রুর জিউসের ভাঁড়ার থেকে আগুন রূপী সব তথ্য চুরি করে এনেছেন। রোজিনা ইসলামের মতো নিবেদিতপ্রাণ গণমাধ্যম কর্মীর পরিবার যে মানসিক যন্ত্রণা আর কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেটা আমরা উপলদ্ধি করি। একই সাথে বলতে চাই, রোজিনা সংবাদিকতার একজন মহৎ দৃষ্টান্ত, আশা করবো তার পথ ধরে আরও অজস্র গণমাধ্যমকর্মী এই জঘন্য অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট ভেঙে ফেলতে এগিয়ে আসবেন। ফেসবুক থেকে
Comments
Post a Comment